নির্বাচকরা বলছেন নতুন শুরু। এই 'নতুন' শব্দ দিয়ে দশ মাস পর নিউ নরমাল সময়ে ক্রিকেটে ফেরাকে বোঝাচ্ছেন তারা। বৃহৎ অর্থে দেখলে
আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে আরও অনেক দিক থেকেই নতুনভাবে শুরু করছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম ইকবালের অভিষেক, নিষেধাজ্ঞা-উত্তর সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন, 'রোড টু ২০২৩ বিশ্বকাপ' ওয়ানডে সুপার লিগে যাত্রা, পেস বোলিংনির্ভর দল গড়া তো 'নতুন বিপ্লব'। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ থেকে শুরু করা এই নতুন মিশনেরপারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে টাইগার ওয়ানডে দলের ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ। যেখানে বড় পরীক্ষা দিতে হবে অধিনায়ক তামিমকে। বাংলাদেশ দল হিসেবে ভালো করলে পায়ের নিচে মাটি পাবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান তামিমের চেয়ে বেশি প্রয়োজন 'টিম ম্যান' তামিমকে। যে কাজে সফল হতে হলে তাকে রাগ-অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে মানসিকভাবে একজন নিরপেক্ষ ও নিবেদিত অধিনায়ক হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক নেতিবাচক ঘটনাগুলো উপেক্ষা করতে জানতে হবে তাকে। খেলোয়াড় তামিম বিগত ক্যারিয়ারে যেটা করতে পারেননি।
অচেনা সহজ পথের চেয়ে চেনা ঘুরপথে যাত্রা যেমন নিরাপদ, তেমনি 'ভিশন ২০২৩' বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নতুনে কম ঝুঁকে পরীক্ষিত ক্রিকেটারের ওপর আস্থা রাখা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সবারই জানা, বাংলাদেশ এতদিন ছিল পঞ্চপাণ্ডবের দল, যেখান থেকে একজনের বিদায় ঘটে গেছে। গত বছর মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা আর টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টের বিবেচনায় নেই। তার উত্তরসূরি হিসেবে উইন্ডিজের বিপক্ষে আজ টস করবেন তামিম। দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাকে। নেতা হয়ে উঠতে হলে এই চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে তামিমকেই। এজন্য কৌশলী হতে হবে তাকে, যেমনটা করতেন মাশরাফি। ওয়ানডের নেতৃত্ব পাওয়ার পরই সহঅধিনায়ক হিসেবে সাকিবকে চেয়ে নিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতেন তিনি। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো একরোখা কোচকে সামলাতে টিম মিটিংয়ে সাকিবকে সামনে ঠেলে দিতেন মাশরাফি। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহর মতো সিনিয়র ক্রিকেটারকেও নিজের মতো করে কাছে টেনে নিতেন তিনি। দলের সবচেয়ে সিনিয়র হওয়ায় যেটা করা সহজ ছিল তার জন্য। তামিমের জন্য বিষয়টি অতটা সহজ নাও হতে পারে, কারণ স্কোয়াডের চার সিনিয়রের তিনজনই অধিনায়ক এবং পারফরমার। সাকিব, মুশফিক আবার তারই সমবয়সী। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা এবং শান্তির পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত দেখা দিতে পারে। এর কোনো কিছুই অজানা নয় তামিমের। নিজেকে সেভাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে তার। গতকাল ম্যাচপূর্ব ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সে ইঙ্গিতও ছিল, 'আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব শুরু করার আগে আমি দুটি টুর্নামেন্টে নেতৃত্ব দিয়েছি। দুটি টুর্নামেন্টই আমার জন্য কঠিন ছিল। কঠিন ছিল বলে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আমার কাছে মনে হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বুঝতে পারবে, আর আমিও বুঝতে পারব আমি কোন দিকে যাচ্ছি।'
শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলীদেরও ব্যাটিং অর্ডারের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে। এগুলো করতে পারলেই স্বপ্ন পূরণ করার পথে এগিয়ে যেতে পারবেন। তার স্বপ্ন হলো, 'আমি যেটা তৈরি করতে চাই সেটা হলো 'বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট'। আমরা অন্যদের অনুসরণ না করে যেটা খেলে আসছি, ওটাতেই ফোকাস করতে চাই। আমরা যেখানে শক্তিশালী, যেগুলো দিয়ে ভালো খেলতে পারি, সেটা দিয়েই ব্র্যান্ড। সেখানেই আমরা মনোযোগ দেব।' এ জন্য তামিমকে যেতে হবে কার্যকর প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে।
0 Comments:
Post a Comment